ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ধোঁয়া আচ্ছাদিত মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা

rohnআমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ:

মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে গত কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাচ্ছে। বেশীর ভাগ রোহিঙ্গারা উখিয়ার ঘুমধুমের কোনাপাড়া, জলপাইতলী, পশ্চিমকুল আমবাগান, উত্তরপাড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওইসব সীমান্ত থেকে বিজিবির বাধা পেয়ে প্রাণ ভয়ে দিকবেদিক ছুটোছুটি করছে রোহিঙ্গারা। তাড়া খেয়ে এখন টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকায় ও নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইক্যংয়ের উনছিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে ৪৭৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু অনুপ্রবেশকালে বিজিবি আটক করে পুশব্যাক করেছে। এছাড়া ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার আরো ৭০ জন রোহিঙ্গা বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। উনছিপ্রাং, হ্নীলা ও জাদীমুরা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশকালে আটক হয়। তাদেরকে মানবিক সহায়তা পূর্বক মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম।

এদিকে সহিংসতার পঞ্চম দিনেও মিয়ানমারে নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, নির্যাতন ও বাড়ী ঘরে অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে সীমান্ত থেকে অন্যদিনের চেয়ে আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়া বেশী লক্ষ্য করা গেছে। উখিয়া উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত থেকে সাংবাদিক শ.ম গফুর জানান, এখনও মিয়ানমারের গুলির শব্দে প্রকম্পিত বাংলাদেশের পুরো সীমান্ত এলাকা। আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়াই আচ্ছাদিত মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা। উখিয়ার ঘুমধুমের কোনাপাড়া, জলপাইতলী, পশ্চিমকুল আমবাগান, উত্তরপাড়া সীমান্ত দিয়ে বিজিবির হাতে আটক প্রায় পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। কিন্তু মিয়ানমার সীমান্ত ও জিরো পয়েন্টে এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে অপেক্ষায় রয়েছে। ওইসব সীমান্তে বিজিবি জওয়ানদের অতিরিক্ত টহল মোতায়েন করা হয়েছে।

অপরদিকে টেকনাফ উপজেলার হারিয়াঘোনা, উলুবনিয়া, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, কানজর পাড়া, খারাংখালী, জাদীমুরা, সাবরাংয়ের হারিয়াখালী ও শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। এরমধ্যে উনছিপ্রাং, উলুবনিয়া, কানজর ও জাদীমুরা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রাতের আধাঁরে বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে লেদা অনিবন্ধিত ও নিবন্ধিত মোছনী নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এছাড়া অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের মংডুর ফতেন্জা, বড়ছরা, নোয়াপাড়া, হাইচ্ছুরাতা, মগ্নিপাড়া, হাঁরিপাড়া, সিকদারপাড়া, ইতিল্লা, হাইন্দাপাড়া, বাগঘোনা, হাওয়ারবিল, পুঁটখালী, দরগারপাড়া, জামবইন্নাইর একাংশ, বালুখালী (নেমেরেলে) ও বুচিডং থানাধিন রাচিডং, সিতাপুরিক্কাসহ একাধিক গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে ভস্মিভুত করেছে সেনাবাহিনী।

ফকিরা বাজার এলাকার হাফেজ আনোয়ার জানান, গত রাতে উনছিপ্রাং সীমান্ত পয়েন্টদিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেন এবং পায়ে হেঁটে কৌশলে লেদা শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। সে জানায়, সেনাবাহিনীরা ভারী অস্ত্রস্বস্ত্র নিয়ে নিরীহ রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে এবং ঘরবাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পাশ্ববর্তী গ্রাম মিজ্জিজালিপাড়ার ছালেহ আহমদের ছেলে সিরাজুল মোস্তফাকে বোমা নিক্ষেপ করে মেরে ফেলে। এসময় নারী পুরুষ ও শিশুরা আতংকে প্রাণভয়ে দিকবেদিক পালিয়ে যায় এবং বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ধেয়ে আসে।

বর্তমানেও মিয়ানমার আরকান রাজ্যে সেনাবাহিনীর তান্ডব অব্যাহত রয়েছে এবং তারা জ্বালাও পোড়াও থেকে রেহাই পেতে এদেশে আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসেন বলে জানান অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা।

উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ টহল জোরদার রয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, পুরো সীমান্তজুড়ে বিজিবি জওয়ানদের নিয়মিত টহলসহ অতিরিক্ত টহল জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সদা সতর্কাবস্থায় রয়েছে সীমান্তরক্ষীরা।

পাঠকের মতামত: